স্বদেশ ডেস্ক:
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে বন্দীদের মধ্য থেকে ১২ থেকে ১৫ জনের মুক্তির বিনিময়ে গাজায় তিন দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। কাতার এই আলোচনায় মধ্যস্ততা করছে। সম্ভাব্য মুক্তির তালিকায় থাকা বন্দীদের প্রায় অর্ধেকই আমেরিকান।
একটি সূত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, ‘কাতারের মধ্যস্ততায় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে।’ হামাস ১২ থেকে ১৫ জন বন্দীর বিনিময়ে তিন দিনের যুদ্ধবিরতি দাবি করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এক থেকে দুই দিনের মানবিক বিরতিতে সম্মত হতে পারে।
হামাসের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছে, মুক্তির তালিকায় থাকাদের মধ্যে ছয়জন আমেরিকান।
সূত্রটি দাবি করেছে, পণবন্দীদের মুক্তি প্রদান এবং মিসর যাতে মানবিক সহায়তা পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারে, সেজন্য তিন দিনের যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন।
তবে বুধবার সন্ধ্যায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, বন্দীদের মুক্তি ছাড়া গাজায় কোনো যুদ্ধবিরতি হবে না। তবে কতজন বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেননি। তাছাড়া তিনি তাদের পরিচয়ের ব্যাপারে কোনো অগ্রাধিকার দিচ্ছেন কিনা তাও জানা যায়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল যুদ্ধবিরতি না দেয়ার পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র কেবল মানবীয় বিরতির কথা বলছে। তারা মনে করছে, যুদ্ধবিরতি হলে হামাস নিজেদের আবার সংগঠিত করার সুযোগ পেয়ে যাবে।
হামাসের হাতে প্রায় ২৪০ জন বন্দী রয়েছে। তবে ইসরাইলের হিসাব অনুযায়ী, হামাসের হাতে বর্তমানে প্রায় ১৮০ জন বন্দী আছে। ইসলামিক জিহাদের হাতে আছে প্রায় ৪০ জন বন্দী। এছাড়া সশস্ত্র আরো কয়েকটি পরিবারের হাতে আরো ২০ জন বন্দী রয়েছে। একাধিক গ্রুপের কাছে বন্দী থাকায় আলোচনায় জটিলতা হচ্ছে বলে ইসরাইল মনে করছে। কাতার মূলত বিদেশে থাকা হামাসের নেতাদের সাথেই মধ্যস্ততার আলোচনা চালাচ্ছে।
ওয়ালা নিউজ সাইট জানিয়েছে, সোমবার টেলিফোন আলোচনার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তিন দিনের মানবীয় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, তাদের হাতে আটক বন্দীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করার জন্য তাদের এই সময় প্রয়োজন।
কিন্তু নেতানিয়াহু এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে হামাসকে বিশ্বাস করা যায় না। তারা হয়তো বেশি বন্দী মুক্তি দেবে না। তাছাড়া একবার যুদ্ধবিরতি হলে আবার আক্রমণ শুরু করা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ তখন আন্তর্জাতিক চাপও থাকবে অনেক বেশি।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ওই দিন হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১৪ শ’র বেশি লোক নিহত হয়। এছাড়া প্রায় ২৪৫ জনের মতো লোককে বন্দী করে নিয়ে আসে। এখন পর্যন্ত দুই দফায় চারজনকে মুক্তি দিয়েছে হামাস।
অন্যদিকে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার লোক নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গাজা থেকে কাউকে মিসরে সরানো হয়নি : হামাস কর্মকর্তা
ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বুধবার গাজা উপত্যকা থেকে রাফাহ সীমান্ত হয়ে কোনো আহত ফিলিস্তিনি বা দ্বৈত নাগরিককে মিসরে সরিয়ে নেয়া হয়নি।’
হামাস কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, আহতদের সরিয়ে নেয়ার তালিকা ইসরাইল অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানালে রাফাহ সীমান্ত বন্ধ ছিল।
ইসরাইলি কর্মকর্তাদের মতে, এক মাস আগে হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলে প্রবেশ করে প্রায় এক হাজার ৪০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৩৯ জনকে বন্দী করলে যুদ্ধ শুরু হয়। নিহতদের বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক।
মিসরের সাথে যুক্ত রাফাহ টার্মিনাল বোমায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডের ছিটমহল গাজা উপত্যাকা থেকে আটকে পড়া বিদেশী ও দ্বৈত নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ১ নভেম্বর থেকে পুনরায় খুলে দেয়া হয়।
ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট ও হামাস নিয়ন্ত্রিত ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, সীমান্তের দিকে রওনা হওয়া অ্যাম্বুলেন্সের বহরে ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলার পর টার্মিনালটি দু’দিনের জন্য বন্ধ ছিল।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ‘হামাস সামরিক শাখা’ ব্যবহৃত একটি অ্যাম্বুলেন্সকে টার্গেট করে হামলা চালায়।
বুধবার এএফপি’র এক সাংবাদিক বলেছেন, তিনি মিশরে যাওয়ার আশায় রাফাহ ক্রসিংয়ে বিপূল সংখ্যক লোকের ভিড় দেখেছেন।
জার্মান পাসপোর্টধারী মাজেন দানাফ এএফপি’কে বলেন, গাজার পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ‘।
তিনি বলেন, সেখানে বিদ্যুত, পানি, জ্বালানিসহ কিছুই নেই এবং হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড় বাড়ছে।
মিসর বলেছে, তারা ক্রসিং দিয়ে প্রায় সাত হাজার বিদেশীকে সরিয়ে নিতে সহায়তা করবে।
সূত্র : আল জাজিরা, এএফপি, টাইমস অব ইসরাইল